নিস্তব্ধতা || কবিতা || মিহিন্দা



মোঃ শাকিল হাওলাদার    



রৌদ্রের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা একসময় কালের ঘুর্নিপাকের
 গোলকধাঁধায় পড়ে আহত হয়ে যায়।
কালের শেষপ্রান্তে হাজার মৃত দিনের পঁচা দেহের উপর বসে
 তারা মুমূর্ষু কাকের মতো আর্তনাদ করে।
সেই আর্তনাদের বিষন্ন সুর ভেসে বেড়ায় পৃথিবীর আকাশে__বাতাসে।
রৌদ্রের প্রতিটি কনার দূর্বল নিঃশ্বাসে
 শুনা যায় মৃত্যুর উল্লাসের নির্মম রব!
ছলনাময়ী ডাইনির মতো নিষ্ঠুর সময় বিশ্বাসঘাতকতা করে
দিনের সাথে!___পায়ের তলায় পিষে
মেরে ফেলে শত শত রৌদ্রের ক্লান্ত কণা।
তারপর অন্ধকারের সাথে সন্ধি করে
চারদিক ছড়িয়ে দেয় তিমিরের কালো __আধারের গুড়া!

আধারের মাঝে
ঘুটঘুটে অন্ধকারের সদ্য জন্ম নেওয়া
 শিশু কণাগুলো__কোনো এক আদিম উল্লাসে
মেতে উঠে
নিস্তব্ধতার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ছড়িয়ে পড়ে__
এই পৃথিবীর মাঠে-ঘাটে, পুকুরে-ক্ষেতে।
পৃথিবীর বাতাস খেয়ে তারা আরও শক্তিশালী হয়ে
একে একে নিঃশেষ করে দেয় পৃথিবীর সব কোলাহল!
নিঃশেষ করে দেয় শিশুদের চিৎকার,মায়েদের গগনফাটানো আর্তনাদ,পিতাদের নীরব অশ্রুফোটার কাতর রব।
 রাক্ষসের মতো তারা গলা টিপে হত্যা করে
সব ঝিঝিপোকাদের।বন্ধ করে দেয় ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাক।
তারপর তারা পৃথিবীর কোলাহলের মৃত দেহের
তাজা রক্ত গায়ে লাগিয়ে স্বাগত জানায় অসীম নিস্তব্ধতাকে।
অসীম নিস্তব্ধতা! 

নিস্তব্ধতা শিশিরের জলে মিশে শুয়ে থাকে পৃথিবীর
 ঘাসে।শাদা কুয়াশার বুকে বসে নিস্তব্ধতা ভেসে বেড়ায়
পৃথিবীর আকাশে।
হয়তোবা খুব দূরে আবার কোনো এক শিশু চিৎকার করে উঠে;
হয়তোবা খুব দূরের নদীর ধারে
বিপ্লবীর মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে জালিমের দল
অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।
হয়তোবা কোনো নির্জন রাস্তায় মরা গলির ভিতরে
কতগুলো যৌনলিপ্সু পশুদের কামপূহের তরে
ক্ষুধার্ত বাঘের মতো খেয়ে নেয় তারা কোনো অবুঝ নারী কিংবা শিশুদের শাদা হাত,কালো চুল!
সেই শিশুর চিৎকার,সেই বিপ্লবীর অমোঘ বাণী,সেই নারীর করুন কান্না যখনই সকল নিস্তব্ধতার চাদর ছিড়ে বের হতে চায়,
তখনই এই বিশাল নিস্তব্ধতা তার বাহুবলে বিড়ালের মতো ঝাপটে ধরে
খেয়ে ফেলে তাদের পরম তৃপ্তিতে! 

আকাশের চাঁদ লাল হয়ে যায়।
সেও চায় অবুঝ শিশুর মতো চিৎকার দিতে।
কিন্তু এই অসীম নিস্তব্ধতা টিপে ধরে তার মুখ,বেধে রাখে তার হাত-পা,চোখ।
আকাশের নক্ষত্রগুলো মৃত পাতার মতো চুপ করে রয়।
এভাবেই প্রতিরাতে নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে দেয় আমাদের মনে মরনের ভয়!

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন