বসন্তের প্রারম্ভে ও অন্যান্য কবিতা | মিহিন্দা

দুর্জয় খান



(১)

সর্বব্যাপী ঘুম


টুপ করে ঝরে গেলো মৃত্যুর আত্মা
কৃষ্ণাভ উপ্যাখ্যান থেকে ফুটে উঠলো অজস্র ফুল
প্রেমফুল।

স্নায়ুকলায় প্রেমের চার বেদ এক হয়ে মিলিত হলো
যবনিকা টানা হলো মানসিক অতৃপ্তির।

ঘাসফুলের মাদুরে শুয়ে পার হয়ে যাচ্ছি সাতসমুদ্দুর
কলাবিদ্যায় বাঁকা টানেল কৃষ্ণদাগে সঙ্গম হলো
মিলিত হলো সর্বব্যাপী ঘুম।



(২)


অলোকপাখি


ঠিক রাত বারোটা,
স্বরপোষী শব্দরা নাচাচ্ছে অপেক্ষার দোলনা।

অরুণ মিত্রের টিটিপাখিটার মতোই আমার অলোকপাখি
রাতপত্রের খামে চিঠি লিখেছে
' যদি উড়ে যাই' ____ হাওয়াগুলো বেমালুম হাওয়া!
শক্ত করে বেঁধে রেখেছি অলোকপাখির ডানা
ঘুমছোঁয়া শিশিরচোখে সূর্যের আগুণ ঢেলে দিয়েছি
যাতে অলোকপাখি দৃষ্টির ভেতর জেগে থাকে কচিভোরের মতো!


(৩)


অনুভব


জীবন যেনো মায়াবী হরিণ
সুন্দরতর ঘাস ও ফুলে ওষ্ঠ লাগায়ে তৃপ্তি পায়!

কাজললতার শরীরের ঘ্রাণে অকপটে হৃদয় দোলে,
পৃথিবীতে রাত্রি নেমে এলে
ভীষণ অনুভব করি
একজোড়া চোখ- একজোড়া ঠোঁট - গুটি কয়েক চিকচিকে আঙ্গুল!


(৪)


প্রথম দেখার অনুপ্রাস


বুকের গভীরে প্রশান্ত পুকুর- আমি ক্ষত মাছ! আকাশে তাকায় বৃক্ষের ফাঁক দিয়ে- কামনার দৃষ্টি নিয়ে
মধু মধু চুম্বন-খোলা হাওয়ার সুর ও স্বর
অপূর্ব ব্যাঞ্জনায় কাছে টানে
তোমার দৃষ্টি - জোড়া ঠোঁট - আদুরে আঙ্গুল!

(৫)


বসন্তের প্রারম্ভে


ময়ূর আর হরিণীর;
চাঁদ ও রাতের, ভীষণরকম টান! যে প্রণয়ের মোহে হৃদয়ে রুচিশীল নর্তকী! শ্যাম-কালার ঘ্রাণ শুঁকতে শুঁকতে দেখলাম,
বেনামী ডাহুকী'র রূপকীয় সাজ! বুঝলাম, তার রূপান্তরে হৃদয় ঘুরে দাঁড়াবে ফের
হৃদয়ের আলিঙ্গনে হৃদয় হয়ে
আরো এক শিল্পের জন্ম হবে উচ্ছিষ্ট পাথর থেকে
বসন্তের প্রারম্ভে।।



(৬)


গোপনতা


তোমার গোপনতায় আমার বাস
তোমার পায়ের আঙ্গুলের ডগায় রোজ চুমু খেয়ে
নাভী বেয়ে উপরে উঠে আসি।

ভেজা চুলের কামনায়
রোজ রাত্রিতে ঘুম ভেঙে উঠে পড়ি তোমার বুকের উপর
রাত্রি আমাকে জাগায় না
আমি রোজ রাত্রিকে জাগায় তোমার কটিভূষণ ছুঁয়ে।

সন্ধ্যামালতীর রঙে রাঙানো একজোড়া ঠোঁটের গোপনতায় আমার বসবাস স্থায়ী করেছি
একজোড়া বিড়ালচোখের গোপনতায় আমি মাছ হয়ে বসে আছি শিকারের আশায়
তোমার হাতের আঙ্গুলের গোপনতায় আমি রোজ তোমার ঠোঁট -মুখ- গাল- খাড়া বুক- নাভী- যৌবনের বাক্স আর ফুলপিঠে চুমু খেয়ে ফিরে আসি ঘনকালো চুলের ভেতর।

তোমার গলার মণিহারের গোপনতায় ফুল হয়ে গুঁজে থাকি মাথার খোপায়
দুল হয়ে হয়ে অনবরত দুলতে থাকি মসৃণ গালে চুমু খেয়ে।

এ গোপনীয়তা একান্ত আমার
কবিতাও জানবেনা এ গোপনীয়তার কলাবিদ্যা
কেউ জানবেনা আমার গোপনীয়তার রহস্য আর কোথায় কোথায়
যা যা ছুঁয়ে আছে তোমায়।।


(৭)


ছবি অলকানন্দা



রাত গভীর হলে ছবিদের কথা বেড়ে যায়,
ছবিও কথা বলতে পারে!

আনা হলো সন্ধ্যাপত্র। টেবিলের উপর রেখে দেয়া হলো সাতজনমের কান্না। দেয়ালে টাঙানো অজস্র ছবি। এবার ক্ষত মাছ জেগে উঠলো মাঝরাতে।

মৃদু সোডিয়াম আলো অন্ধকার ভেদ করে
মেহেকচাদরে ঠিকড়ে পড়ছে ____
জানালার ওপারে অন্ধকার রাত্রির মুখাবয়ব
জোনাকগুলো ঝিলিমিলি আলো জ্বেলেছে
মুখাবয়বের উপর।
চোখের ইশারায় স্পষ্ট হচ্ছে চাঁদিনীর আভা
সে আভায় উজ্জ্বল হচ্ছে অলকানন্দার কবুতরচোখ।

মুনিরাহেনার সাথে টেবিলের উপর কান্নাগুলো
হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো ___ মিলিয়ে গেলো সন্ধ্যাপত্র।
দেয়ালের একজোড়া ঠোঁট থেকে সন্ধ্যামালতী ঘরের অন্ধকার ভেদ করে যোগমায়ার কায়দায় কবির সম্মুখে প্রতীয়মান।

কবি " মেহেককানন্দা কাব্য " বন্ধ করে মুনিরাকে বিদায় জানালো
ঠাকুরমার চাদর জড়িয়ে ঘুতকুমারীর গান গাইতে গাইতে মুনিরাও চললো স্বর্গপাখিদের পালকতলে!

অলকানন্দা আপনি এসেছেন!
কপালের টিপ ওমন বাঁকা কেনো আপনার!
উত্তর নেই।
ঘড়ির কাঁটার অনবরত টিকটিক আওয়াজ
অলকানন্দার শব্দ কানে পৌঁছাতে দিচ্ছে না।

ঘড়ি থামিয়ে দেয়া হলো
সময় থামিয়ে দেয়া হলো!
পৃথিবীতে আর ভোর না আসুক
অলকানন্দা কথা বলুক
মুখোমুখি বসে থাকুক অনন্তকাল
কবি উপভোগ করুক চিত্রকলার মুগ্ধতা
সন্ধ্যামালতীর ঈষৎ হাসি লেপ্টে লেগে যাক
সুর- স্বর - কন্ঠহীন জীবন।।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন