খসড়া খোয়াব
কী ভালো আছো, দৃশ্যান্তরের সংসারে পাতার পড়শি হয়ে একা
তবু, জেনো আমাদের ঝরে যেতে হবে প্রতিটি আসন্ন শীতের
কুহকে পৃথা, ঋতু বা ফুল-বাগেনের ‘পর দিয়ে উড়ে যায় হাওয়ায়
চড়ে-এরোড্রাম-স্বপ্নের অচিন পাখি, বহুদূর ওড়ায় ইচ্ছে-ডানা।
আজও আমাদের ভুলের কোন যথার্থ সংগ্রহশালা নেই, জানি, তবু
ভূগোলের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে ভুল, কার জন্য এ ফুলন্ত করবীর ফুল,
সত্যিই একদিন অনঙ্গ আমি হয়ে শুয়ে থাকবো মাটির বিছানায়
অচেনা বিদেহী আত্মার কম্পন বুকের পিঞ্জরে লুকিয়ে ফেলবো।
এই খসড়া জীবন থেকে প্রতিপালিত কত গহন-ক্ষত নিয়ে অবিরত
নাবিকের সাথে ‘মাটির জাহাজ’ চলে যায়, চলে যাবে বন্দর-উদ্দেশে
সূর্যাস্তের রঙ মেখে মেখে উঠে আসে সূর্যমুখীর মৃতদিন, তবু অনাদি
অশেষ সঙ্গম-মুহূর্তের উদ্বেল নিঙড়ানো কখনওই শেষ হবে না ।
কেবলই ক্লিশে জন্ম থেকে জন্মে নিশিদিন, বৃশ্চিক বিমর্ষতায় হাওয়ার
ওঙ্কার মিশে যায় বৃষ্টির গন্ধমে, মনসিজ বাগানে ঢুকে পড়ে প্রেতছায়া।
বাঙময়
এখন কেবলই আমরা মৃতদার মানুষের মতো প্রহর গুণছি
চোখে অশতীপর শূন্য-দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি সমুখের দিকে
ভাবছি, চারপাশে কেন অন্তহীন দুঃখের ঘন আবরণ থেকে
তৈরি করেছি প্রতিদিনের অনিমেষ নিনাদের বিষাদ-বাগান
নীরবতার সমুদ্র-গহনে ডুবিয়ে রাখি নিজের প্রতিবিম্বের ছায়া
তারপর দেখি হাঁপিয়ে উঠছে প্রাণের আগুন-টানা হাপরের হাত
অথচ অবিরাম এই হইচই থেকে শুধু হাওয়া-বদল খেলায়
বেভুল হয়ে জলের কাছে জলের গান হয়ে থাকি, বা বাঁচি ।
ক্ষীয়মান
এই চোখ থেকে শীত-পায়রার খেয়াব আর ওম-দে’য়া রোদের
সমূহ উপকথা, ধুলো ভেঙে ভেঙে উড়ে যায় হাওয়ার বেসাতি
কেবলই দুপুরের দীর্ঘশ্বাস থেকে ঈষদুষ্ণ তাপদাহ নরম হতে
হতে ফুরিয়ে যায়, কিংবা এভাবেই হাঁটতে হাঁটতে নগ্ন চোখে
জমে ওঠে বিষণ্ন বিষাদের জলপাইয়ের ঝরে যাওয়া লালাভ
পাতা, ভেসে যায় জমিনে, ভেসে যায় মায়ামি দিন-স্বপ্নের ঘুম
মিয়্রমাণ সান্ধ্য বারান্দায় নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে প্রতিদিন মৃত-
ঈশ্বর, তুবও জীবনারম্ভে বা শেষে বেজে ওঠে কান্নার সাইরেন।
যেন একইভাবে শুরু থেকে শেষে হওয়ার আয়োজন, কেন যে
ইলিশ-মৌসুম ফুরিয়ে গেলে বৃষ্টির কুহক থেকে খসে পড়ে ঘন-
আবছায়ার অর্বুদ, ঝরে পড়ে জলের মতো, যেমন হলুদপাতাদের
ঝরার আগে ঘুমের ভিতরে বাতাসের বাঁশি বাজে, ছুটতে ছুটতে
অনুদিন, আমাদের পাথর যুগের প্রাচীন পায়ে জমে ধুলোর দাগ,
সেতার বা গিটার বাজানো আনন্দের আঙুল থেকে খসে পড়ে, তবু
ফোঁটে অলীক-আয়ুর আঙুরফুল, ভুলসমগ্র নিয়ে অস্তগামী, নিস্বপ্ন-
নিদ্রা নামে নিঝুম শহরে, কোলাহল থামলেও কোথাও অবসর নেই ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন